প্রকাশিত: Mon, Jul 3, 2023 11:42 PM
আপডেট: Mon, Jun 30, 2025 1:37 AM

[১]চাল ডাল তেল আটা থেকে শুরু করে মশলা, দেশে সবই আমদানি নির্ভর

বিশ্বজিৎ দত্ত: [২] দেশে প্রধান খাদ্যশস্য চাল, ডাল আটা, তেল থেকে শুরু করে ৫০ ধরনের মশলা আমদানি করতে হয়। [৩] জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, চলতি বছর বাংলাদেশকে প্রায় ৯০ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হতে পারে।

[৪] কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, প্রতি বছর পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচামরিচ ছাড়াই ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার মশলা আমদানি করতে হয়।

[৫] বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত বছর এই ৫ খাতেই ৬ হাজার ৪৭৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। 

[৬] কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ২০২২ সালে ৩ কোটি ৮৪ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। এই হিসাবে  দেশে চালের চাহিদা মিটিয়েও  ২০-২৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। কিন্তু এফএওর হিসাব বলছে, ২০২৩ সালে ৬৫ লাখ টন গম  ও আরো ২৫ লাখ টন চাল আমদানি করতে হতে পারে। 

[৭] বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ সালের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত  খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে ২৪৬৬.৮ মিলিয়ন ডলারের। যদিও এটি গত বছরের চেয়ে ৭ শতাংশ কম আমদানি হয়েছে। এরমধ্যে চাল আমদানি হয়েছে, ৫৬৯.৮ মিলিয়ন ডলারের। যা গত বছরের চেয়ে ৩৪.৫ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময়ে চাল আমদানি হয়েছিল ৪২৩.৭০ ডলারের। ২০২২-২৩ সালের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত গম আমদানি হয়েছে ১৮৯৯ মিলিয়ন ডলারের। গতবছর একই সময়ে গমের আমদানি ছিল ২০৫৯.২০ মিলিয়ন ডলারের। বাজারে আটার দাম বৃদ্ধির পরেও গমের আমদানি কমেছে ৭.৯ শতাংশ। 

[৮] দেশে আঁদা, পেঁয়াজ ও রসুন ও অন্যান্য মশলা মিলিয়ে ২০২২-২৩ সালের মে থেকে জুন পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৩৭৩ মিলিয়ন ডলারের। যা গত বছর ছিল ৩১৮.৬০ ডলার। এই হিসাবে চলতি বছর মশলা আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ শতাংশ। 

[৯] কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাবে, দেশে এবারে  সর্বোচ্চ ৩২ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।  কিন্তু দেশে চাহিদা রয়েছে ৩৫ লাখ টনের । ঘাটতি পূরণে  পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আদার চাহিদা ৩ লাখ ৭১ হাজার টন। কিন্তু এবারে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার টন। আদা আমদানিরও অনুমতি দেয়া হয়েছে। ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী দেশে রশুনের চাহিদা ৬ লাখ টন। দেশে উৎপাদন হয় ৫ লাখ ২২ হাজার টন। বাকি রসুন আমদানি করতে হয়। 

[১০] দেশে কাঁচামরিচের চাহিদা  রয়েছে ৫ লাখ টনের । উৎপাদন হয় ৩ লাখ টন। প্রতি বছর কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। এর বাইরে আরো ৫০টি বিভিন্ন ধরনের মশলা প্রতি বছরই আমদানি করতে হয়।

[১১] এ বিষয়ে কৃষিবিদ খায়রুল আলম প্রিন্স জানান, সরকার মশলার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প নিয়েছে। তার পরেও অনেক মশলা আমাদের আমদানি করতে হবে। বিশেষ করে প্রকল্পগুলোর উদ্দেশ্য হলো, ধানের জমির বাইরে মশলার জমি বের করা । চাষিদের মশলা চাষে উৎসাহিত করা। তিনি বলেন, দেশে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে গিয়ে অনেক ফসল উৎপাদনে পিছিয়ে পড়েছি। এখন সময় হয়েছে  অন্য ফসলের দিকেও বিশেষ নজর দেয়ার। 

[১২] দেশে ২০২২-২৩ সালে ডাল আমদানি হয়েছে ৯০৭.৫ মিলিয়ন ডলারের।  ভোজ্য তেল আমদানি হয়েছে ২৭৩২.৫ মিলিয়ন ডলারের। এই দুই খাতেই গত বছরের চেয়ে আমদানি বেড়েছে যথাক্রমে ১৭ ও ৮.৩ শতাংশ। 

[১৩] কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ডালের চাহিদা ২৬ লাখ ৫৭ হাজার টন। এরমধ্যে উৎপাদন হয় ৯ লাখ ৩৮ হাজার টন। বাকি ১৭ লাখ ১২ হাজার টন  ডাল আমদানি করতে হয়। 

[১৪] এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, অনেক মশলা উৎপাদনেই ব্যাংক থেকে ২ থেকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হয় চাষিদের। এ ছাড়াও বাড়ির আঙিনায় কিছু ফসল উৎপাদনে আমরা সার কীটনাশক, বীজ ও পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করি। তবে কাঁচামরিচ বা আদা বা এধরনের ফসলে এই সহায়তা দেয়া হয় না। আমরা চেষ্টা করবো আগামীতে যাতে এসব খাতেও সহায়তা করা যায়। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব